১৯৭১

King Rayhan
3 min readAug 23, 2019

--

১৯৭১ by হুমায়ূন আহমেদ book review.

হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্মের সংখ্যা বেশ বড়। তিনি দুই শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা হলেও বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা সাহিত্যকর্মের সংখ্যা হাতে গোণা। সেই অল্প ক’টি সাহিত্যকর্মের একটি ‘১৯৭১’।

১৯৭১ গল্পটি দৃশ্যপট চিত্রায়িত হয়েছে ১৯৭১ সালের নীলগঞ্জ নামের ছোট্ট একটি গ্রাম কে কেন্দ্র করে।

মিড় আলি নামের এক ৭০ বছর বয়স্ক অন্ধ বৃদ্ধ এর সামনে দিয়ে মিলিটারি বাহিনী প্রথম নীলগঞ্জ এ প্রবেশ করে।

নিলগঞ্জ এ দুইজন ব্যক্তি ছড়া সবাই ছিলেন স্থানীয়। এই দুই জন এর একজন হচ্ছেন নীলগঞ্জ এর স্থানীয় স্কুল এর হেডমাস্টার আজিজ মাস্টার এবং আরেকজন হচ্ছেন এই এলাকার ইমাম সাহেব

মিলিটারি প্রবেশ এর ব্যপারটি প্রথম লক্ষ্য করেন নীলগঞ্জ এর ইমাম সাহেব যখন তিনি মাত্র ফজর নামায শেষ করে কোরান তেলোয়াত করছিলেন।

মিলিটারিরা নীলগঞ্জ এর লোকাল স্কুল এ ঘাটি তৈরি করে।

সূর্য উঠার কিছুক্ষণ এর মধ্যেই নিল শার্ট পরা এক লোক কে ইমাম সাহেব দেখতে পান। যে এসেছিল ইমাম সাহেব কে মিলিটারি ক্যাম্প এ ডেকে নিয়ে যেতে। ভীত সন্ত্রত ইমাম ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে ক্যম্প এর দিকে পা বাড়াতে থাকে। এবং এখান থেকেই গল্পের সূচনা হয়।

গল্পের আরোও একটি গুরুত্বপুর্ন চরিত্র হচ্ছে আজিজ মাস্টার, যিনি নিজেকে একজন রোমান্টিক কবি বলে মনে করতেন। তার সমস্ত কবিতাই ছিল মালা নাম এর একটি মেয়েকে নিয়ে। মালা ছিল জয়নাল মিয়াঁর মেয়ে। জয়নাল মিয়া নীলগঞ্জ এর প্রভাবশালীদের মধ্যে একজন। আজিজ মাস্টার এই জয়নাল মিয়াঁর বাড়িতেই থাকতেন।

পরেরদিন সকালে আজিজ মাস্টার কে ডাকা হয় এবং তাকেও মুক্তি বাহিনীর ব্যপারে জিজ্ঞাসাবাত করা হয়।

সেই নিলশার্ট পরা লোকটির নাম ছিল রফিক, যে মেজর এজাজ আহমেদ এর সাথে থাকত একজন দোভাষী হিসেবে।

লেখক এই রফিক নামের চরিত্রতে অনেক বেশি রহস্য রেখেছেন। এই চরিত্রের আসল রূপ জানতে পাঠককে গল্পের একফহুম শেষ পাতা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে পাঠক ধিধান্বিত হয়ে যাবে এই ভেবে যে রফিক কি বাঙ্গালিদের দলে নাকি মেজর এজাজ এর ডান হাত নাকি কেবলই একজন দোভাষী?

আজিজ মাস্টার এর দিকে ফিরে আসা যাক। মেজর এজাজ তাকে প্রস্তাব প্রস্তাব করেন যে মালার সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিবেন। যদিও মাস্টার এবং ইমাম এই দুইজন এর মধ্যে কেউই মুতিবাহিনি সম্পর্কে কিছুই জানতো না তাও মেজর তাদের বিশ্বাস করতে পারছিল না। মেজর তাদের দুইজন কে স্কুল ঘর এ বন্ধই করে রাখে এবং প্রচুর অপমাঞ্জন ভাবে অত্যাচার করতে থাকে।

মেজর এজাজও কিছুটা অদ্ভুত চরিত্রের ছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি নিজেকে ন্যয় বিচারক হিসেবেও প্রকাশ করেন। চিত্রাবুড়ি নামে পরিচিত খুবই বদরাগী একজন হিন্দু বৃদ্ধাকে মেজর এজাজ ন্যায় বিচার দেন। মেজর তার ছেলে হত্যাকারিকে গুলি করে খুন করার হুকুম দেন।

আবার এই মেজর এজাজকেই আমরা দেখতে পাই সকল হিন্ধু মানুষদের মেরে ফেলার হুকুম দিতে, যাতে করে এলাকার মধ্যে মানুষের মনে মিলিটারি সম্পর্কে ভীতি ছড়াতে থাকে।

ইমাম সাহেব কে মেজর আগেই মেরে ফেলেন এবং আজিজ মাষ্টার কে খুবই বাজে ভাবে মানুষিক অত্যাচার করতে থাকেন। আজিজ মাষ্টারকে উলঙ্গ করে তার পুরুষাঙ্গে ইট বেধে মালার বাবার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। মেজর এজাজ তার বাবাকে বলে এই লোক আপনার মেয়েকে ভালোবাসে। আপনার মেয়েকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করুন ওকে তার তার চলবে কিনা। দেখে ময় হয় তার যন্ত্রপাতিতে সমস্যা আছে। সমস্যা নাই আমি তার জন্যে বিশেষ excercise এর ব্যবস্থা করেছি। তার তার যন্ত্রে ইট বেধে দিয়েছি। তাতে যদি একটু উন্নতি হয়। আজিজ মাস্টার এক সময় অপমান আর সহ্য করতে না পেরে বলেন আমাকে পেরে ফেলেন। মেজর এজাজ এইটারই অপেক্ষায় ছিলেন। আজিজ মাস্টার কে সেখানেই গুলে করে মেরে ফেলে।

রফিক যদি মেজর সাথেই থাকত সবসময় কিন্তু মেজর যে তাকে অবিশ্বাস করে এটা তিনি তাকে কখনো বুঝতে দেননি। রফিল সব সময় মেজর এর সাথে সাথে থেকে সকল খবর মুক্তিদের দিয়ে আসতেন।

গল্পলের একধুম শেষে দেখতে পাওয়া যায় মেজর এজাজ রফিক কে বলেন “রফিক তুমি মনে হয় জানো আমি তুমাকে অবিশ্বাস করি না, এখন বল তুমি কি বেঁচে থাকতে চাও কিনা”। যদি চাও তবে মুক্তিদের ব্যপারে আমাকে যা জানো বলে দাও। রফিক বলে দেয় যে সে জানে না। গল্প টি শেষ হয় রফিক কে জল এ নামিয়ে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে।

--

--

Responses (1)